কই যাস?
-সুসাইড করমু
-আইডিয়া আছে?
-না তবে আমি পারবো কনফিডেন্ট'স
আছে
-আচ্ছা চল তাহলে
-কই?
-সুসাইড করতে, বাহ!! রে আমার
একমাত্র দোস্ত সুসাইড করবে আমি তা
দেখুম না তা কি হয়?
-ওকে চল আর হ্যাঁ খবরদার আমাকে
বাঁচানোর চেষ্টা করবিনা একদম।
-ওকে, আচ্ছা ক্যাম্পাসের
আশেপাশে কাক পক্ষী মানুষ গরু ছাগল
সবাই জানে তুই আমার একমাত্র দোস্ত
সবাই জিজ্ঞেস করলে আমি কি
বলবো তুই কেন সুসাইড করছিস?
-দেখ নীলু আমি এখন সিরিয়াস
মোমেন্টে আছি ফাজলামি করিস
না।
-আচ্ছা বলবিতো কেন সুসাইড করবি?
-কারণ আমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নাই
যে কিনা সামান্য একটু সাহায্য
করার ক্ষমতা রাখে না। তাই আমি
সুসাইড করমু।
-হাহাহাহাহা হা...হা
হাহাহাহাহা
-থাক তুই হ্রামি আমি যাই ইন্দুরের ওষুধ
খামু তাহলে চটপট করতে করতে মরে
যামু
-ছিঃছিঃ তুই আমার দোস্ত হয়ে
ইন্দুরের ওষুধ খেয়ে মরবি!! না...না তা
হতে পারেনা মিঃ রাতুল সাহেব।
-দোস্ত আমি সিরিয়াস
-আমিও সিরিয়াস
-চল বিয়ে করে ফেলি
-ওকে চল
-কই?
-কাজী অফিসে, কেন বিয়ে
করবিনা?
-পাত্রী কই? এমা.... এই মাইয়ার শখ
কতো, তোর মতো মেয়েকে আমি
বিয়ে করবো? আমিইইইইই? এটাতো
ঠিক বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য!!
-থাক তুই আমি যাই, খবরদার তুই আমার
পিছু নিবিনা..
-ওকে যা..যা আমার বয়ে গেছে
আপনার পিছু নিতে, কত মেয়ে আমার
মতো স্মার্ট ছেলের সাথে প্রেম
করতে সিরিয়াল পায়না আর হেয়
আসছে চান্স নিতে।
-ছাগল একটা (এই কথা বলেই নীলু
সোজা একটা রিক্সা ডেকে বাসায়
চলে যাচ্ছে) এতক্ষণ যার সাথে
ঝগড়া করছি সে আমার বউ, না...না বউ
না.. ছোট বেলায় সেই পিচ্চি
থাকতে একসঙ্গে বড় হইছি,
ছোটবেলায় কতদিন যে আমরা বিয়ে
করছি তার হিসেব নেই, কারণ
জোলাভাতি খেলার সময় আমরা
দুইজন বিয়ে করতাম খেলা শেষে
আবার মারামারি লেগে যেতাম, ও
যখন খুব ছোট থাকতে বউ সাজতো
লজ্জায় কুটকুট হয়ে যেতো আমিও
লজ্জা পেতাম যখন আম্মু এসে হাজির
হতো, আম্মু আমাদের অবস্থা দেখে
হাসতো আর আমি দৌড় দিয়ে রুমের
ভিতরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতাম।
আমরা এসএসসি পরিক্ষা একই স্কুলে
দিলেও ইন্টার লেভেল একসঙ্গে
থাকার সৌভাগ্য হয়নি, কারণ নীলুর
বাবা কিছুতে মহিলা কলেজ ছাড়া
ভর্তি করাবেন না, এই নিয়ে দুইজনই
অনেক কষ্ট পাইছি অনেক সময়তো
কলেজে গিয়েও নীলুকে খুজতাম,
তবে ওর কথা হলো কলেজের যাওয়া
আসার দ্বায়িত্ব আমার ওর
সিকিউরিটি গার্ডের দ্বায়িত্ব
পালনে যদি বরখেলাপি করি
তাহলে ও পড়ালেখা বন্ধ করে দিবে
শেষ পর্যন্ত বাধ্য ছেলের মতো দুইটা
বছর বিনাবেতনে দ্বায়িত্ব পালন
করি, ওদের কলেজের মেয়ে গুলোও
ছিলো খুব বেশী বদ, আমাকে
দেখলেই হইছে দুলাভাই আইসক্রিম
খাবো, দুলাভাই ফুসকা খাবো, এই
খাবো সেই খাবো করতে করতে
পকেটের অবস্থা বারটা বাজিয়ে
ছাড়তো, তারপরেও কিছুই করার
ছিলো না আমি নিশ্চিত জানি যে
আমি যদি ওদের কলেজে যাওয়া বন্ধ
করে দিই তাহলে নীলু নিশ্চিত
অনিদিষ্ট কালের জন্য কলেজে
যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করবে, টেস্ট
পরিক্ষা আগে আমি খুব অসুস্থ হয়ে
পড়ি ওইসময় দুইজনেরই পড়ার চাপ
কলেজেও ইম্পোটেন্স সাজেশন এবং
পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি মূলক ক্লাস
নিচ্ছে এই মেয়ে আমি যতদিন
কলেজে যাইনি নীলুও ততদিন কলেজে
যায়নি
এক কথায় সেই মাপের পাগলী।
-
শেষমেষ কলেজ লাইফ শেষ করলাম
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে,
দুইজনই খুব ভালো রেসাল্ট করি, এখন শুরু
হইলো পাব্লিক ভার্সিটি ভর্তি
হওয়ার পালা, নীলুর বাবার একটাই
কথা হয়তো পাব্লিক ভার্সিটিতে
চান্স পাবে না হয়ে একেবারের
জন্য শশুর বাড়িতে চান্স করে দিবে,
নামলাম ভার্সিটি ভর্তির যুদ্ধে,
ওমা এখন দেখি ওর চান্স পাওয়া
নিয়ে যতটা মাথা ব্যথা নেই
তারচেয়েও বেশী আমার চান্স
পাওয়া নিয়ে ওর মাথা ব্যথা, দোস্ত
ভালো করে পড় না হয় রিক্সা
চালাতে হবে, দোস্ত একদম বাসা
থেকে বাহির হবি না দুইমাস কষ্ট কর,
একদিন হইছে কি আমার কলেজ ফ্রেন্ড
সবাই মিলে কক্সবাজার যাবো
রেসাল্টের পর সবাই একজন
একজায়গাতে চলে যাবো আর কখন
দেখা হয় নাকি না হয় তার কোন
ঠিক ঠিকানা নাই, এই কথা কোন রকম
নীলুর কানে গেছে হইছে তো আমার
১২টা বেজে গেছে, আম্মুকে গিয়ে
বলছে, আন্টি জানেন রাতুল
কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে মেয়ে
নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে
যাবে, আবার শুনছি নাকি আরো
খারাপ খারাপ জায়গায় যাবে,
ছিঃছিঃ আন্টি আমি এসব ভাবতেও
পারছি না আপনি ভেবে দেখেন,
আম্মুকে পটিয়ে নিয়েছে সন্ধ্যায়
বাসায় এসে বসছি মাত্র কোথায়
থেকে আম্মু এসে অনেক অনেক
বকাজগা করলো, কিছুক্ষণ পর
মোবাইলে এসএমএস দেখে অবাক
হলাম, মিঃ রাতুল বাবু প্লিইজ মন
খারাপ করেনা, আমরা ভার্সিটি
ভর্তি হওয়ার পর একসঙ্গে কক্সবাজার
যাবো কেমন..হিহিহি এই
মেসেজটা দেখে এতো বেশী
মাথা গরম হলো যে.. রুমের দরজা
খুলে চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করলাম,
ওই আন্টি আমাকে নিয়ে আপনার
মেয়ের এতো মাথা ব্যথা কেন, আমি
যেখানে যাই সেটা আমার ইচ্ছা
আপনার মেয়ে এসে আম্মুকে আমার
সম্পর্কে এতো আজে বাজে বলবে
কেন, আপনার মেয়েকে সামলান
পরে কিন্তু ভালো হবেনা, আরো
অনেক কথা বলছি এসব কথা শুনে নীলুর
আম্মু নীলুকে অনেক বকা দেয়, শুনলাম
মেয়েটা নাকি অনেকদিন না
খেয়ে ছিলো, কারো সাথে কথা
বলেনা, প্রায় সময় কান্না করে, রুমের
দরজা খুলেনা আমিওও খুব মিস করতাম
মাঝেমাঝে ছাদের উপরে উঠে
কান্না করতাম ওইসময় ফিল করলাম যে
নীলুকে আমি অনেক বেশী
ভালোবাসি ওরে ছাড়া আমার
একদিনও চলবে না, পরে ভার্সিটি
ভর্তি পরিক্ষা হয় দুইজনই একি
ভার্সিটিতে আলদা
ডিপার্টমেন্টে চান্স পাই,
ভার্সিটির প্রথম দিন নীলুকে দেখি
কিন্তু ভর্তি পরিক্ষার দিনেও অনেক
খুজে নীলুকে দেখতে পাইনি,
পরিক্ষার দিন সকালে নীলুর আম্মুকে
জিজ্ঞেস করি নীলু কই.? আন্টি
বল্লেন নীলুতো অনেক আগেই চলে
গেছে ওইদিনও খুব মন খারাপ নিয়ে
পরিক্ষা দিতে যাই.... ভার্সিটির
প্রথম দিন সবাই নবীন ওইদিনের ঘটনা
দেখে বড় ভাইরা পুরাই অবাক হয়ে
মনে হচ্ছে যেন পুরো ক্যাম্পাস অবাক
হয়ে যায়, সবার সামনে নীলুকে
থাপ্পড় মারি, যে মেয়ে একসঙ্গে
এতটা বছর কাঁটিয়েছে সেই মেয়ে
পাশাপশি থেকেও এইভাবে ভুলে
ছিলো কিভাবে, ওইদিনের পর
থেকে আমরা আবার আগের মতো
চলাফেরা শুরু করি যদিও আমরা ফাস্ট
ইয়ার কাউকে গনার টাইম নাই দুইজন
একসাথে তো পুরো পৃথিবী
আমাদের রাজত্বে।
-
বাসায় গিয়ে দেখি আম্মুর মন খারাপ
প্রায় কেঁদো কেঁদো অবস্থায় আম্মু,
আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে?
-তুই নাকি সুসাইড করতে গেছিলি?
-আপ্নাকে বলছে কে?
-নীলু আমাকে সব বলেছে, তুই নাকি
মেয়েটাকে আজকেও অনেক
বকেছিস?
-আম্মু পাগলীর সাথে থাকতে
থাকতে তোমারও মাথা গেছে
-আমার মাথা গেছে তাই না? ওকে
এই পাগলী মেয়েটাই কিছুদিন পর
আমার একমাত্র ছেলের পুত্রবধূ হয়ে
আসবে।
-নীলু আজকে সব বলছে তো, তুই নাকি
ওরে নিয়ে কাজী অফিসে যাওয়ার
জন্য জোরাজুরি করছিস?
-আমমমম্মা তুমি সত্যি পাগল হই গেছো
-হইছে আর ন্যাকামী করতে হবেনা
আমি আর ভাবী (নীলুর আম্মু) আজ
থেকে বেয়াইন কথা পাক্কা।
-(আর কিছু না বলে সোজা রুমে
গিয়ে শুয়ে আছে, আজকে কেন
জানি অস্থির অস্থির লাগছে, আর
চিন্তা করতেছি নীলুকে আমি
ভালোবাসি নাকি নীলুর প্রতি শুধু
আমার ভালোলাগা, আরে দূর
ভালোলাগা হলে কিছুদিন আগে
ঝগড়া হওয়ার পর এতো কান্না করছি
কেন, কিছুই মাথায় কিছুই কাজ
করছেনা, কিছুক্ষণ পর আম্মু খাইতে
ডাকছেন, আম্মুকে বলছি বাহির
থেকে খেয়ে আসছি, এতটুকুতেই
ঘুমিয়ে গেলাম, ঘুম থেকে উঠে
ছাদে গেলাম, দেখি নীলু বসে
আছে খুব মন খারাপ আমিও কি ভেবে
ওর পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর...
- সরি (নীলু) আমি আসলে দুষ্টামি
করে বেপারটা বলছি কিন্তু এতদূর
হয়ে যাবে ভাবিনি
- ওহ!!
-(দুইজনই চুপচাপ বসে আছি আজকে কেন
জানি একজন আরেকজনের মুখের
দিকে তাকাতে পারছি না)
কিছুক্ষণ পর নীলু বসা থেকে উঠে
বাসায় চলে যাচ্ছে।
-দাঁড়া (আমি)
-(খুব মায়াভরা মুখ নিয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে)
-ভালোবাসি
- (জড়িয়ে ধরছে খুব শক্ত করে ধরে
কান্না করছে) রাতুল আমি তোকে
ছাড়া থাকতে পারবোনা কখনোই
তোকে ছাড়া নিজের অস্থিত্ব খুজেঁ
পাইনা,
-ভালোবাসিস না?
-ভালোবাসি তো!! অনেক বেশী
ভালোবাসি।
-আমিও ভালোবাসি খুব বেশী
বেশী।
(অবশেষে দুটো মনের মিলনে সাক্ষী
হয়ে রইলো শেষ বেলার সোনালী
আলোর অস্ত যাওয়া সূর্য, জয় হলো
অনেক দিন জমে থাকা, হাজারো
অভিমান, অভিযোগ, এবং দুষ্ট মিষ্ট
দুটি মনের মিলন, বেঁচে থাকুক ওদের
ভালোবাসা, অনেক অনেক শুভ
কামনা).....
লিখা::::অপ্রকৃতি

Post a Comment

 
Top